জোবায়ের আহমেদ নবীন
ঈদ মানেই খুশি, আর সেই খুশি পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে ভাগ করে নিতে প্রতি বছর ঘুরমুখো হয় রাজধানীর উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষ। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি, তবে এখানে টানা বৃষ্টি বাধা হয়ে দেখা দিয়েছে। এমনিতেই ডেঙ্গু আতঙ্কে দিশেহারা নগরবাসী, তারপর আবার টানা বৃষ্টি! এ যেন মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা। বুধবার রাত থেকে টানা বৃষ্টিতে নগরীর বিভিন্ন সড়কে পানি জমে যায়।
এর ফলে তীব্র যানজটে বাসের শিডিউল বিপর্যয় দেখা দেয়। সায়েদাবাদ, মহাখালী, শ্যামলী, কল্যাণপুর ও গাবতলী বাস টার্মিনাল ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। অন্যদিকে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে প্রায় সবকটি ট্রেনই দেরিতে ছেড়েছে। নির্ধারিত সময়ে ট্রেনগুলো স্টেশনে পৌঁছাতে না পারার ফলেই এ বিপর্যয়। এর ফলে সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। ট্রেনের অপেক্ষায় থেকে কেউ কেউ বই-পত্রিকা হাতে নিয়ে পড়তে থাকেন, কেউবা পায়চারি করেন, আবার অনেককে দেখা যায় নিজ হাতে তুলে সন্তানকে খাইয়ে দিতে। যখন নির্ধারিত সময়ের অনেক পড়ে ট্রেন আসে তখন দরজা-জানালা দিয়ে হুড়মুড় করে ট্রেনে উঠতে দেখা যায় তাদের।
এদিকে আবহাওয়ার অশান্ত মনোভাবের কারণে নৌপথে চলাচলও বিঘ্নিত হয়। এর মধ্যে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে লঞ্চ চলাচল বৃহস্পতিবার সাময়িক বন্ধ করে দেয়া হয়। তবে ভোগান্তি লাঘবে ঘরমুখো নৌযাত্রীদের ফেরিতে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।
এদিকে টানা বৃষ্টির কারণে কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া নৌরুটে বেশ ভোগান্তিতে পড়েছে ঘরমুখো মানুষেরা। লঞ্চ ও ফেরিতে রয়েছে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়। বৃষ্টিতে ভিজে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যাত্রীদের গন্তব্যের পরিবহনে উঠতে দেখা গেছে। তবে শিমুলিয়া থেকে কাঁঠালবাড়ী ঘাটে এসে পৌঁছাতে লঞ্চগুলোর সময় স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কিছুটা বেশি লাগছে। লঞ্চের চালকরা জানিয়েছেন, মাঝপদ্মায় প্রচণ্ড স্রোত থাকায় সময় বেশি লাগছে পদ্মা পার হতে।
এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে কমলাপুর স্টেশনে এসে সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যেতে চাওয়া যাত্রীরা। বুধবার ট্রেনের কিছুটা বিলম্ব থাকলেও বৃহস্পতিবার কোনো ট্রেনই শিডিউল অনুযায়ী ছেড়ে যায়নি। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গগামী ট্রেনগুলোর প্রতিটিই নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে যেতে পারবে না বলে স্টেশন কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয়। একদিকে বৃষ্টি অন্যদিকে ট্রেনের দেরিতে ভোগান্তিতে পড়েন তারা।
দিনের শুরুতে রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনটি সকাল ৬টা ২০ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও কমলাপুর ছেড়ে যায় সকাল সাড়ে ৮টার দিকে। চিলাহাটীগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস সকাল ৮টায় ছাড়ার কথা থাকলেও স্টেশন থেকে ছেড়ে যায় ১০টা ২৫ মিনিটে। এ ছাড়া সকাল ৯টায় রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার সম্ভাব্য সময় দেয়া হলেও ছেড়েছে ১১টায়। দিনাজপুর-পঞ্চগড়গামী একতা এক্সপ্রেস সকাল ১০টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ছেড়েছে সোয়া ১১টায়।
বিআইডব্লিউটিসির কাঁঠালবাড়ী ঘাট সূত্র জানিয়েছে, ঈদে যাত্রীচাপ মোকাবিলায় ৮৭টি লঞ্চ, ১৭টি ফেরি ও ২ শতাধিক স্পিডবোট রয়েছে। বৃষ্টি হওয়ায় স্পিডবোটের পরিবর্তে লঞ্চ ও ফেরিতেই যাত্রীদের পার হতে দেখা গেছে। বিআইডব্লিউটিসির কাঁঠালবাড়ী লঞ্চঘাটের ট্রাফিক পরিদর্শক আক্তার হোসেন বলেন, বৃষ্টি হলেও বাতাস না থাকায় পদ্মা শান্ত রয়েছে। লঞ্চে সকাল থেকেই যাত্রীদের ভিড় রয়েছে।
ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক আবদুস সালাম মিয়া জানান, ফেরি চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। ১৭টি ফেরি সকাল থেকে চলছে। পরিবহনের পাশাপাশি প্রচুর যাত্রী ফেরিতে পার হচ্ছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার উত্তম প্রসাদ পাঠক বলেন, যাত্রীদের নির্বিঘ্নে ঘরে ফেরা নিশ্চিত করতে কাঁঠালবাড়ী ঘাটে প্রশাসনের চার স্তরের নিরাপত্তা রয়েছে। পুলিশ, র্যাব, আনসার, ফায়ার সার্ভিস ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের দল সার্বক্ষণিক মনিটরিং রয়েছে ঘাট এলাকায়।
এদিকে দেশের কোথাও কোথাও শুক্রবারও মাঝারি থেকে ভারিবর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়; রংপুর, রাজশাহী, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ী দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারিবর্ষণ হতে পারে।
এ ছাড়া সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা এক থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে। আগামী তিন দিনে আবহাওয়ার সামান্য পরিবর্তন হতে পারে বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে।
আবহাওয়া চিত্রের সংক্ষিপ্তসারে বলা হয়েছে, উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ উপকূলীয় এলাকায় অবস্থানরত মৌসুমি নিম্নচাপটি পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয় এবং আরও পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে বুধবার বিকেল ৪টা নাগাদ ভারতের উড়িষ্যা পশ্চিমবঙ্গ উপকূল অতিক্রম করে। এটি আরও পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে মৌসুমি স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়ে ঝাড়খন্দ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এটি পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ক্রমশ দুর্বল হয়ে যেতে পারে।
মৌসুমি বায়ুর অক্ষ ভারতের রাজস্থান, উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, নিম্নচাপের কেন্দ্রস্থল অতিক্রম করে বাংলাদেশ হয়ে উত্তরপূর্ব দিকে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে তা প্রবল অবস্থায় রয়েছে।